ঝুঁকি নিয়ে উঁচু জলাধারে উঠছে শিশুরা

ঝুঁকি নিয়ে উঁচু জলাধারে উঠছে শিশুরা
প্রায় ১২ তলা উঁচু ভবনের সমান নির্মাণাধীন জলাধারের উপরে বসে নীচের দিকে পা ঝুলিয়ে বসে আছে তিন সুবিধাবঞ্চিত শিশু। কোন ধরণের নিরাপত্তা ছাড়া’ই এভাবে বসে থাকার দৃশ্য দেখে ভয়ে আঁতকে উঠবেন যেকেউ। এটি কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্টস্থ পানির টাওয়ার বা উঁচু জলাধারের ঘটনা।

কাছে গিয়ে দেখা যায়, শুধু এই ৩ শিশু’ই নয় ওখানে আরো প্রায় ১০-১২ জন টাওয়ারে উঠানামা করছে। এই কাজে তারা একেকজন সময় নিচ্ছে ১৫-২০ মিনিট। কোন ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই জরুরী মুহুর্তে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া বিশেষ রড বেয়ে তারা উপরে উঠছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা প্রতিনিয়ত নির্মাণাধীন এই টাওয়ারে উঠানামা করে। তারা কারো কথা শুনেনা। এছাড়া এসব দেখাশোনার জন্য কোন নিরাপত্তাকর্মী নেই। এতে যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে দূর্ঘটনা। উপর  থেকে পড়ে হতাহতের আশংকা রয়েছে।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে মোহাম্মদ রায়হান জানান, অন্যদের দেখাদেখি সেও টাওয়ারে উঠছে। প্রথম প্রথম ভয় লাগলেও এখন স্বাভাবিক লাগে। উপর থেকে ভালভাবে সমুদ্র সৈকত সহ পুরো শহর দেখা যায়। এটি দেখতে অনেক ভাল লাগে।

মোহাম্মদ জমির উদ্দিন নামে আরেক শিশু জানায়, ভয় লাগলেও ওই টাওয়ারে উঠতে ভাল লাগে। অনেক ওখানে উপরে উঠে বিভিন্ন জিনিস খায়। আবার অনেকে সাহস দেখিয়ে টাওয়ারের উপর বসে পাঁ ঝুঁলিয়ে বাজি লাগে।
কেউ বাধা দেয় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলেন, ‘অনেক সময় আশপাশের দারোয়ান ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাধা দিলেও তাদেও চোখ ফাঁকি দিয়ে ঠিকই উপরে উঠে যায়। তবে ভয় লাগে যদি উপর থেকে পড়ে যায়। এছাড়া উপরে উঠার সময় নীচের দিকে কম তাকায়’।
টাওয়ার সংলগ্ন গণ শৌচাগারের দায়িত্বরত একজন জানান, শিশুগুলো কারো কথা শুনেনা। এই উঁচু টাওয়ার দেখলে এমনিতে ভয় লাগে তারমধ্যে শিশুরা নির্ভয়ে উপরে উঠছে। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনায় ঘটতে পারে। আসল কথা হলো, তারা শিশু। অনেক সময় তারা বিপদের ভয়াবহতা বুঝতে পারছেনা।
স্থানীয় আরেক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানায়, ঝুঁকি নিয়ে টাওয়ারে উঠার ক্ষেত্রে শিশুরা যতটুকু দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অথাৎ যারা এই টাওয়ারের দেখাশোনা দায়িত্বে রয়েছে। তাদেরই দায়িত্ব শিশুসহ কেউ যেন ঝুঁকি নিয়ে টাওয়ারে উঠতে না পারে। এটি তাদের ব্যর্থতা ছাড়া কিছুইনা।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা জানান, কক্সবাজার শহরের ৫ টি পয়েন্টে অবস্থিত ‘ওভার হেড বা উচ্চ জলাধার’ তৈরি করা হয়েছে শহরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে। নির্মাণাধীন থাকার কারণে হয়ত এমনটা হচ্ছে। তবে বিপদ হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।
এই প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার মোঃ বখতিয়ার জানান, শহরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে শহরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল, ঈদগাহ ময়দান, সুগন্ধা পয়েন্ট, হাসমিয়া মাদ্রাসা পয়েন্টে ওভার হেড বা উচ্চ জলাধার স্থাপন করা হয়েছে। এই টাওয়ারগুলোর উচ্চতা ১০ থেকে ১২ তলা পর্যন্ত। টাওয়ারের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। 
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র ইন্সপেক্টর ওমর ফারুক জানান, নির্মানাধীন টাওয়ারে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ঝুঁকি নিয়ে উঠার খবর তিনি এখন জানতে পেরেছেন। শিশুদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও সহ সম্পাদক: ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম (সজীব)

© 2024 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.